Recent Posts
লেখার পাতা
ছোটগল্প

লক্ষ্যভেদ
উঠানে দড়াম করিয়া কিছু ভারী জিনিস পড়িবার শব্দ হইল। সংলগ্ন ঘরগুলির মধ্যে ভীষণ গুমোট অন্ধকার চাপিয়া বসিয়া আছে । এমনভাবে আলোকের প্রতিটি প্রবেশদ্বার রুদ্ধ যে শঙ্কা হয় এই ঘরে কোনদিন আলো প্রবেশ করে নাই বা করিবেও না । এই ঘরে যে মানুষ বাস করিতে পারে তাহা কল্পনারও অযোগ্য । কিন্তু মানুষ ছিল । তাহারা কিছুদিন যাবৎ যে আলোককে একটা যমের মত শত্রু ভাবিতেছিল । গ্রামে জাতিদাঙ্গা শুরু হইয়াছে আজ প্রায় মাস তিনেক হইল । পুলিশে পুলিশে চারিদিক ছয়লাপ হইয়া গিয়াছে তাহাও প্রায় মাসখানেক। উঠানের শব্দের খোঁজে একখানি কালো শীর্ণ মুখ ডান দিকের ঘরের দরজা ফাঁক করিয়া বাহির হইল । সে বিপিনের মা । পুলিশের নাইট ডিউটির টহল চলাকালীন একটা অস্পষ্ট কোলাহল সেও শুনিয়া ছিল কিন্তু কিছু ঠাহর করিতে পারে নাই

নিরর্থক
জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিতে কুয়ার ধারে দাঁড়াইয়া সে তাহার তিন মাস সতেরো দিন বয়সী মাজা রংয়ের নধর পুত্রসন্তানটিকে প্রগাঢ় চুম্বন করিল । হে প্রাণপ্রিয় সস্তা খেউরের রসিক পাঠক , আমাদের ফট করে ফুটে উঠে ঝপ করে ফুরিয়ে গেল গল্পমালার উনপঞ্চবিংশৎ গল্পে আপনাকে স্বাগত জানাই । এ গল্প এমন একটি মেয়ের দাঁত ওঠার আগে যার নামকরণ হয়নি । নগা মন্ডলের ষষ্ঠ কন্যার নামের প্রয়োজন বহুদিন অনুভূত হয়নি । কারণ কেউ তাকে ডাকতো না । দাদু ঠাকমা তার বহু আগে জগত মদ্যের মায়া ত্যাগ করায় আদর করার কেউ অবশিষ্ট ছিল না । তাই শোয়া থেকে উল্টোনো , উল্টোনো থেকে কুক্কুরীমুদ্রা , কুক্কুরীমুদ্রা থেকে হামাগুড়ি হয়ে হাঁটা পর্যন্ত তার মা ভিন্ন কেউ খেয়াল করলো না । খেয়াল করলো দাঁত ওঠার সময় । উপরের মাড়ির সামনের

সংকট
জীবনবাবু মাঝরাতে বাথরুমে উঠলেন । কাল বিশ্বাসঘাতকতার আবহাওয়ায় খিচুড়ি খেয়ে ফেলেছিলেন । অনেকক্ষণ ধরে মেঘ জমে জমে সন্ধ্যেবেলায় বেশ দুটান হাওয়া ছাড়লো । বেশ মিষ্টি , ঠান্ডা , ভেজা ভেজা হাওয়া । কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে এই খবর দেওয়া হওয়াটির ভরসায় নিশ্চিন্তে খিচুড়ি চাপিয়ে ফেললেন জীবনবাবু । আসলে চাপালেন না , গিন্নিকে মোলায়েম হুকুম করলেন মাত্র । গিন্নির খিচুড়ি তোফা । শুধু একটু ঘি পড়লে সাথে কিছু লাগেনা । সেই বৃষ্টি ঢুঁ ঢুঁ । একবার ঢুঁ মারবার প্রয়োজনও মনে করল না । আর ‘বঙ্গে শিল্প নেই ইলেকট্রিক আছে’ এ স্লোগানও ক্ষণে ক্ষণে মিথ্যে হতে লাগলো । জীবনবাবু আকাশের মতোই গুম মেরে গেলেন । রাত সোয়া দশটা নাগাদ খেয়ে , এগারোটায় শুয়ে , সাড়ে বারোটায় যখন বাথরুমে উঠলেন তখনও ঠিকঠাক মাঝরাত হয়নি

ইষ্ট-অনিষ্ট
আমরা উৎকর্ণ হয়ে থাকতাম । মা-কাকিমা উদ্বিগ্ন । বাবা-কাকারা কী থাকতেন জানিনা , কিন্তু স্বস্তিতে থাকতেন না এটুকু ঠিক । দোতলা বাড়ি আমাদের । যদিও পলেস্তরাগুলো বাইরের দিকে কিছু কিছু খসেছিল , ভিতর সব ভালই সাফসুতরো ছিল । দুর্গামন্দিরের পেছনে শরিকে শরিকে ভাঙতে ভাঙতে , উঠোন ভেঙে পাঁচিল উঠে , একটা তিনহাত সরু গলি পেরোলে তবে আমাদের সদর দরজা । দু’পাশের সিংহ পেছনদিকে বড় রাস্তার শরিকের ভাগে , দাঁত খিঁচিয়ে কুত্তা । আমাদের সিংহও ছিলনা শুধু সিংহের খসে যাওয়া কটা কেশ নিজের সিন্দুকে পুরে দাদু শ্রীরাম গোস্বামী বিরাজিত ছিলেন । বাবা কাকা দুজনেই কোন সিংহভাগের আশা না করে স্টিল প্লান্ট এর কারখানায় দৈনিক পঁচাত্তর পয়সা রেটে মাটি খোঁড়ার সুপারভাইজারি নিয়েছিলেন । শহর পত্তনের সময় সেই চাকরি মাসে ওভারটাইম নিয়ে ষাট-সত্তর