পরিচয়
তমোনাশ চট্টোপাধ্যায় উচ্চ শিক্ষিত এবং সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে এসেছেন। তাঁর মা প্রয়াত শ্রীমতি শিখা রায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত ও সম্মানিত স্কুল শিক্ষিকা এবং সেই সাথে অত্যন্ত মিষ্টি এবং সুরেলা কণ্ঠের একজন উচ্চ শ্রেণির গায়িকা। তাঁর কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাঁর দান অগণন । মা এবং তাঁর বাবা শ্রী পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায় তাকে নান্দনিকতার একটি অত্যন্ত উচ্চ শাখা হিসাবে সঙ্গীতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
তমোনাশ বাংলা ভাষাসাহিত্য ও ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। যুক্ত আছেন ভাষা চর্চার বিষয়ে। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, সংস্কৃত ও উর্দুর পর তাঁর এখনকার চর্চা জার্মান ও মারাঠি ভাষা। ভাষাচর্চার মাধ্যমে দুনিয়াব্যাপী জীবনচর্চার মৌলিক একত্ব খুঁজে নিতে চান তমোনাশ।
তমোনাশ লেখালিখির শুরু ক্লাস সেভেনে। আরো পাঁচটা বাঙালি ছেলের মতোই সেও ছিল কবিতা। আর কবিতায় ছিল প্রকৃতিপ্রেম ও ছিলেন জীবনানন্দ। ওই রাস্তাতেই প্রথম হাঁটেন তিনি। পরে অনিবার্যভাবে আসে নরনারীর প্রেম। খুব অল্প অন্য বিষয়ের অস্তিত্ব থাকলেও তাঁর অনেক কবিতার বিষয়ই প্রকৃতি ও প্রেম ।
গল্প তিনি লেখেন মোটামুটি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় থেকে। লিখেছেন খুব কম। কিন্তু বিষয় বেশ বিস্তৃত। আশ্চর্যের বিষয় গল্পে প্রেম ও প্রকৃতির বদলে মানুষেরই প্রাধান্য। নানা চরিত্র যাঁদের না ধরিয়ে দিলে আলাদা চেনাই যায় না তাঁদের নিয়েই এই গল্পের সার।
তমোনাশের চলার পথে এসেছেন এমন কয়েকজন জীবনগুরু যাঁদের ভোলা অসম্ভব। প্রথম তাঁর অঙ্ক শিক্ষক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য মশাই। যিনি শিখিয়েছেন প্রশ্ন করতে। তারপর এসেছেন সপ্তর্ষি চক্রবর্তী । যাঁর জন্য আজও সুস্থ বিকাশশীল সংস্কৃতির এত কাছে নিজেকে রাখতে পেরেছেন তমোনাশ। এসেছেন বাঁকুড়ার ছান্দারে ‘ ‘অভিব্যক্তি ‘ গড়ে তোলা বিখ্যাত উৎপল চক্রবর্তী মশাই। তাঁর কাছে পেয়েছেন লেখার অনুপ্রেরণা ও সহজ জীবন – উঁচু চিন্তার পরাকাষ্ঠা।
তমোনাশ প্রাথমিকভাবে তবলার একজন প্রখ্যাত শিক্ষক শ্রী সুরেশ কুমার ধারার কাছ থেকে তালিম নেন। কয়েক বছর পর তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর এ গ্রেড শিল্পী শ্রী প্রবীর কুমার ধারার তত্ত্বাবধানে আসেন। পরবর্তীকালে তিনি আচার্য পণ্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের সিনিয়র ছাত্র শ্রী প্রশান্ত কুমার সিংহের কাছ থেকে তালিম গ্রহণের একটি দুর্দান্ত সুযোগ পান। এখন তমোনাশ বিশ্ববিখ্যাত তবলা বাদক পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে স্নেহ, অনুপ্রেরণা এবং তালিম পাচ্ছেন।
তিনি বঙ্গীয় সঙ্গীত সমিতি থেকে সঙ্গীত ভাস্কর হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং স্বর্ণপদক পান। চণ্ডীগড় প্রাচীন কলা কেন্দ্র থেকে সঙ্গীত প্রভাকর হিসেবে পান রৌপ্য পদক। এছাড়াও ভারতবিখ্যাত ভাতখান্ডে মিউজিক কলেজের সর্বোচ্চ পরীক্ষা সঙ্গীত নিপুণ পরীক্ষাও তিনি সফলভাবে উত্তীর্ণ।
তাঁর আরো একটি ভালবাসার জিনিস তাঁর বিদ্যালয়। বাঁকুড়ার অন্তঃপাতি সেই সুদূর ইছারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আজ পনেরো বছর নিজেকে চিনছেন তিনি। নবীনদের সাথে কাজের আনন্দ পাবার এই উপায় করে দেবার জন্য জীবনের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় চালু করেছেন একটি গ্রন্থাগার। প্রায় ১৫০০ বইয়ের সেই কার্যক্রমটি পুরোপুরি দেখাশোনা করেন তমোনাশ। এ তাঁর কাছে এক অতি উচ্চ আনন্দের সামগ্রী।
খেলা,গাছ, আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা, ভ্রমণ এসবে তমোনাশের আগ্রহের দিকটি সবসময়েই তাঁকে সমসাময়িক করে রাখে।
সাধারণ জীবন – উঁচু চিন্তন তাঁর কাছে এটিই আদর্শ।