আমরা উৎকর্ণ হয়ে থাকতাম । মা-কাকিমা উদ্বিগ্ন । বাবা-কাকারা কী থাকতেন জানিনা , কিন্তু স্বস্তিতে থাকতেন না এটুকু ঠিক ।
দোতলা বাড়ি আমাদের । যদিও পলেস্তরাগুলো বাইরের দিকে কিছু কিছু খসেছিল , ভিতর সব ভালই সাফসুতরো ছিল । দুর্গামন্দিরের পেছনে শরিকে শরিকে ভাঙতে ভাঙতে , উঠোন ভেঙে পাঁচিল উঠে , একটা তিনহাত সরু গলি পেরোলে তবে আমাদের সদর দরজা । দু’পাশের সিংহ পেছনদিকে বড় রাস্তার শরিকের ভাগে , দাঁত খিঁচিয়ে কুত্তা । আমাদের সিংহও ছিলনা শুধু সিংহের খসে যাওয়া কটা কেশ নিজের সিন্দুকে পুরে দাদু শ্রীরাম গোস্বামী বিরাজিত ছিলেন । বাবা কাকা দুজনেই কোন সিংহভাগের আশা না করে স্টিল প্লান্ট এর কারখানায় দৈনিক পঁচাত্তর পয়সা রেটে মাটি খোঁড়ার সুপারভাইজারি নিয়েছিলেন । শহর পত্তনের সময় সেই চাকরি মাসে ওভারটাইম নিয়ে ষাট-সত্তর টাকা ঘরে আনত । আর ভাগে যে কুড়ি বিঘে পড়েছিল , তাই সম্বৎসর ভাত মুড়ি জুগিয়ে দিত । টান হয়নি আর বাড়াবাড়িও দেখিনি ।
দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠে ঘরের জানলা দিয়ে নিচে তাকালেই রুইদাসদের বস্তি । আমরা অনেক সময়ই খিড়কির দোর দিয়ে বেরিয়ে ওদের সঙ্গে খেলতাম । ফিরতি পথে মা গঙ্গাজলের ছড়ায় আমাদের দাওয়ায় তুলত । জানালার নিচেই ভুপেদার বাড়ি । আমাদের বাবার বয়সী কিন্তু ওর বাবা নাকি আমার দাদুকে ঠাকুদ্দা বলতো তাই ভুপে আমাদের দাদা । সন্ধ্যে একটু গড়ালে , ঠাকুমার শাঁখের আওয়াজ মিলিয়ে যাবার খানিক পরেই ভূপাল রুইদাস বেশিরভাগ দিন টং মাতাল হয়ে ফিরত । ফিরেই হাতের যা পেত কাঠ , ঝাঁটা , চ্যালাবাঁশ তাই দিয়ে বউকে ঠেঙ্গাত , ছেলেমেয়েগুলো পরিত্রাহি চ্যাঁচাতো আর আমাদের ঘরে বাবা কাকা যেই থাকত , দেখতাম ছুটে গিয়ে এক বালতি জল ভূপের মাথায় ঢেলে আসতো । তবে ঠান্ডা । প্রায় রোজের এই কেত্তনে সবাই তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছিল । বাবা কাকা মাঝে মাঝে দাদুকে বলতেন ‘পুলিশ বলে ব্যাটাকে একটু কড়কে দিলে হয় না !!’ দাদু মজা করে হেসে বলতেন
‘ তোরা আর মাতলামি কি দেখলি ! আমাদের ছোটকালে এইবাড়ির কোঁচাওলা বাবুদের যা ছিল…. এ তো নস্যি ! তোরা কাজে যা আমি ভুপেকে বলবোখন । বলেওছিলেন , কিন্তু ভুপে তিন দিনের বেশি কোন বারই মানতে পারেনি । প্রথম কদিন খেত কিন্তু মারধর বন্ধ থাকতো । তারপর আবার জল ঢালতে হতো ।
কাত্তিক মাস পড়ল । প্রতি ভোরে কৃষ্ণের কীর্তন গেয়ে এক দল লোক সারা গ্রাম ঘুরত । । সে দলের খুলি কিন্তু শ্রীযুক্ত ভূপাল রুইদাস । সেই কাত্তিক মাসের ভোরের ভূপাল পৃথিবীর বাইরের একজন । কুয়াশামাখা ভোরে দূর থেকে যখন কীর্তনীয়ার দলের গান কানে আসতো তখনও আমাদের পুরো কান খোলেনি । সেই গানে ভূপাল খুলির হাতের বোলে যেন মধু ঝরে পড়তো । সারা গাঁ গেয়ে শেষে আমাদের বাড়িতে চা-মুড়ি খেয়ে আরেক প্রস্ত গান হত । দাদুর পাকা কান , হাতেও খোলের খোলতাই বাজ ছিল । সে আসরে ভূপালের বাজনায় ঠাকুরও খুশি হতেন বোধহয় ।
দূর্গাপুজোর মুখে মুখে ভূপাল যেত নদী পরিয়ে কোন আত্মীয়ের বাড়ি । সেখান থেকে বলে কয়ে নিয়ে আসতে একটা জয়ঢাক । পুরো পুজো মাতিয়ে রেখে দিত সেই ঢাকের বোল । আমাদের শরিকানা সেই পুজোর অষ্টমীর সন্ধ্যায় আবার প্রতিমার সামনে আসল হত ঢোলের আসর । এদিক ওদিক থেকে নামজাদা ঢুলিরা আসত । ঘন্টা দুই তিন কাউকে নড়তে দিত না । সেই দলের মধ্যে একবার দেখি কার একটা ঢোল ধার করে নেমে পড়েছে ভুপেদা । তুড়ে বাজালো । দেশ-বিদেশাগত বড় বড় ঢুলি উড়ে না গেলেও তুবড়ে গিয়েছিল নিশ্চয়ই ।
আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি । দেখলাম কেশবমিস্তিরি একরাশ কাঠকুটো নিয়ে সদরের পাশে বসে পড়েছে । বাটালি , রন্দা দিয়ে ঠকঠক ঘসরঘসর করে কী বানাচ্ছে । মাকে জিজ্ঞেস করলে মা বলল
‘কি জানি ! দাদু কী করাচ্ছেন । ‘
আমি তখন , পিসির ফেলে শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়া , হারমোনিয়ামটা নিয়ে আঁ আঁ করতাম । মাঝেমধ্যেই সন্ধ্যেবেলা দাদুর সাথে বসতে হতো তাল ঠিক করতে । পুরনো স্টিলের বাঁয়া আর বড় মুখের তবলা দিয়ে দাদু ঠেকা রাখতেন । সন্ধ্যায় দাদুকে জিজ্ঞেস করলাম
দাদু মিস্তিরি কী বানাচ্ছে
দাদু বললেন
ভুপেকে একটা দোকান করে দিচ্ছি । স্টেশনের কাছটায় বসিয়ে দেব ।
‘ কী দোকান দাদু ?’
‘ ঢাক-ঢোল-তবলা-খোল এসব সারাবে । ওর ওটা জাত বিদ্যে ।’
‘রোজ রোজ বাড়ির পেছনে এই ওত্তেচার সহ্য হয় না । তুমি ওকে বসিয়ে দাও । কিছু করে খাক । বউটা বাঁচে ।‘
ঠাকুমা সায় দিলেন ।
কেশব মিস্তিরি পাঁচদিন ধরে একটা চৌকো মত কাঠামো বানালো । চারকোণে চারটে পায়া মাঝখানে দুটো ঠেকনা দেবার পায়া । আমাদের হাতে মেপে দেখলাম দুদিকেই সাত হাতের একটু কম করে হলো । কেশব এরপর কাঠামোর মাথায় টিন চাপিয়ে পেরেক ঠুকে দিল । টিনের কাজের দিনটায় বাড়ির দোতলার রাস্তার দিকে জানলা দিয়ে সূর্যের আলো ছাতের কড়ি-বর্গাগুলোকে ধাঁদিয়ে দিয়েছিল । আড়াইশো টাকা লাগল দাদুর । রাতে মা-বাবা কথা বলছিল , শুনলাম । কাঠামোর চারদিকে চারটি মোটা কাঠ মোটা গজালে ঠুকে মিস্তিরি বানালো চারটে হাতল । ভুপেদা আর ওদের পাড়ার কটা লোক কাঠামোটা নিয়ে গিয়ে স্টেশনের পাশে আমাদেরই পড়ে থাকা একটু জায়গায় বসিয়ে দিলে হয়ে গেল ভূপাল রুইদাসের খোল- তবলার দোকান ।
একটু একটু করে দোকান দাঁড়িয়ে গেল । সকাল সাতটার মধ্যে ভুপে দোকান খুলে ফেলে , ধূপধুনো দেয় , কাজ করে , খানিকপর কোঁচড়ে করে দুটো মুড়ি নিয়ে খায় । দুপুরে ওর মেয়েরা ভাত দিয়ে যায় । কিন্তু বেলা চারটের পর আর ওকে দোকানে পাওয়া যায়না ।খুব কোন খদ্দের বসে থাকলে আধঘণ্টা টেকে তারপরই পাততাড়ি গুটিয়ে , ঝাঁপ ফেলে , তালা দিয়ে বিশ্বকর্মা আর সরস্বতী কে জোড়হাতে প্রণাম করে ভূপাল রুইদাস বারুনির আরাধনায় মত্ত হয়। বাড়িতে ঠেঙাঠেঙ্গি বন্ধ । সন্ধ্যা সাতটা আটটায় ঘরে ফিরে দুটো ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ে । চারিদিকে ভুপের হাতের কাজের বেশ প্রশংসা । স্টেশনের কাছে বলে পাশের অনেক জায়গা থেকেই কাজ আসত । কলকাতা থেকে মাল আনতে মাসে একদিন অন্তত কলকাতা যেত ভুপেদা । দোকান ভালই চলতে আরম্ভ করল । কিন্তু ওই পুরো দুধে ফোঁটা চোনা বারুনির পুজো । মাঝে মাঝে কারো কারো কাজ করে ফেরত দিতে মাস দুমাস ঘুরিয়ে দেয় । গেলাশের আসরের পাশাপাশি হাতে টাকা পেয়ে জুয়োটাও । তবুও ঠিক ছিল । বিশেষ মারধোর একদম বন্ধ । ওটা আমাদের বড় শান্তি ।
ইতিমধ্যে একদিন সন্ধ্যায় দাদুর সাথে গানে বসতে গিয়ে দেখি তবলার চারটে ছোট ইদুরে কেটে ফর্দাফাইন করেছে । বাঁয়ার গাব নড়ছিল কদিনই ।
ডাক ভুপেকে
দাদুর কথায় আমরা দুই ভাই বাড়ির খিড়কি দিয়ে গেলাম । ভুপেদা বাড়ি নেই । বলে এলাম
এলে দাদু ডেকেছে
পরদিন ভোর বেলার দরজায় কড়া । ঠাকমা সবে উঠোনে গোবর ছড়া দিচ্ছিলেন । বাঁহাতে করে খুলে দেখেন পরিষ্কার ছোট ধুতি আর ফতুয়া পড়ে হাত কচলাচ্ছে ভুপে । চুলে তেল দিয়ে , চান করে , মাথা আঁচড়ে সে এক বিনয়াবতার ।
কত্তাবাবু ডেকেছিলন
ওগো ভূপাল এসেছে
ঠাকুরমার কথায় দাদু এসে পড়লেন
ভুপে , শোন , দেখ এই বাঁয়াটার গাব করে দিবি আর এই দেখ হারামজাদা ইঁদুরে কেমন ছোটগুলোর কেমন দফা সেরে দিয়েছে পুরোটা পাল্টাবো না একটু চিরে গিঁট মেরে দিবি ।
কত্তাবাবু কথাটো হৈলো … পুরোটাই পাল্টে নেন কেনে !! নতুন কাড়ার ছোট আসিছে , আপনার থেঁয়ে দাম লিতে লারব ।
ও করে দিস । ঠিক আছে । কিন্তু পয়সা তোকে পুরোই দেব । কম আমিও দিতে পারব না ।
লারব কত্তা !! তোমার থেঁয়ে দাম লিলে উপ্রে জবাব যোগাবেক লাই ।‘
কথা তো ষোল আনা । যাক তাড়াতাড়ি ফেরত দিস ।
ভুপেদা দু-হাতে তবলা-বাঁয়া ঝুলিয়ে বেরোচ্ছে দাদু আবার ডাকলেন
খোলটাও নিয়ে যা তো ! কাত্তিকমাস আসছে গাওনায় লাগবে তো ! একটু কষে টেনে দিবি । ধ্যাবধ্যাব করছে । দু-হাতে তবলা-বাঁয়া আর গলায় খোল ঝুলিয়ে বিচিত্রমূর্তি ভুপেদা দোকানে চলল ।
চলল তো চলল সেই চলল আর বাড়িমুখো আর হয় না । একমাস , দুমাস , আড়াই মাস… দুদিন আমরা হাফপ্যাডেল করে ঘুরে এলাম । একদিন দেখতে পেলাম খুব মোলায়েম করে বললো
এই হপ্তাই দিয়ে আসব দাদা । বাবুকে বোলো ।
আবার পনেরো দিন বাদে গেলাম । দোকান বন্ধ । বাবার অফিসের একজন বসের স্ত্রী গান শিখছিলেন । তবলা-বাঁয়া অর্ডার পেয়েছিল ভূপালই । আগাম নিয়ে নিয়েছে কিন্তু ডেলিভারি দেয় না । বাবাকে প্রায়ই উপরওয়ালা বলেন । বাবা ভীষণ বিরক্ত । একদিন কাজ থেকে ফিরে খিড়কি দিয়ে গেলেন । ভূপাল নাকি বাড়ি নেই । বাবা বললেন
ঘরেই আছে জোচ্চোরটা । আমাকে দেখে আর বেরোলো না । বউকে দিয়ে বলালো ঘরে নেই । কাল দোকানে ধাওয়া করব ।
দোকান বাবার কারখানার রাস্তার উল্টোদিকে তাই সকালে উঠে আর সময় হয়না ।
দোলের পরে হোলির দিনে আমরা দোতলার ঘরে শুয়ে আছি । শুয়ে শুয়ে জানলা দিয়ে গাছের পাতা দেখছিলাম । ভাইরা ঘুমোচ্ছে , মাও ঘুমিয়ে পড়েছে , মনে হল খিড়কির দোরের শেকলটা কেউ আস্তে আস্তে নাড়াল । চুপ করে শুয়ে আছি । ঘন দুপুর । এখন কিসে শেকলট নাড়াবে । নিশ্চয়ই ভূত । আবার একটু দরজার কড়া , ফিসফিস কী সব আওয়াজ পেয়ে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দেখি ভুপেদার বউ মাটিতে বসে বসে কাঁদছে । ঠাকুমা দাঁড়িয়ে আছেন । কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না । তারপর ঠাকুমা রান্নাঘর থেকে করে একগাদা চাল এনে ভুপেদার বউয়ের কোঁচড়ে ঢেলে দিলেন । ভুপেদার বউ চোখ মুছে মাটিতে দূর থেকে গড় করে খিড়কি দিয়ে বেরিয়ে গেল । ঠাকুমা দাওয়ায় উঠতে গিয়ে হঠাৎ আমায় দেখতে পেয়ে হাতছানি দিলেন । আমি নিঃশব্দে নিচে গেলে বললেন
‘কাউকে বলিস না , ভুপে আজ তিনচার দিন বাড়ি আসেনি । ওদের ঘরে দানা নেই । সত্যিই তোর দাদুর মুখে কালি দিল হতভাগা । যা শুয়ে পড় । দাদু কেও একদম বলিস না কিন্তু !’
আবার ফিরে শুয়ে পরলাম ।
একটা কাত্তিক তো কেটেই গেল । খোল-তবলা-বাঁয়া কিচ্ছু ফেরত এলো না । ভুপেদাও প্রায় অজ্ঞাতবাসে । দোকান সর্বদাই তালা । বহুলোকের বহু যন্ত্র তার মধ্যে পোরা । একদিন সকাল বেলায় দোকানের সামনে সাত-আটটা সাইকেল দাঁড়িয়েই আছে । বিরাট জটলা , চেঁচামেচি । শেষে ঘণ্টা দুই অপেক্ষা করে উত্তেজিত লোকজন তালা ভেঙে যে যা পারলো নিয়ে বাড়ি চলে গেল । ডালা ভাঙা দোকানটা পড়ে রইল । সবাই চলে গেলে আমরা তিন ভাই গিয়ে দেখলাম আমাদের কোন বাজনাই ভিতরে নেই । দাদু শুনে গুম হয়ে বললেন
‘ ওটাকে যেখানে দেখবি ধরে নিয়ে আসবি । ‘
তারপর ছাদে উঠে ভুপেদার বউ কে ডাকলেন
‘ভূপাল কিন্তু খুব খারাপ করছে ব্যাপারটা । কোথায় সেটা ?? ডাকো !! আমি কিন্তু পুলিশে দেব । হাজত ঘোরাবো । আমার যন্ত্র নিয়ে মাতলামি !? দেখি কদ্দিন ঘাপটি মেরে থাকে !! হাতে পাই একবার !!’
এর ঠিক ছয় দিনের মাথায় , বেলা বারোটা সাড়ে বারোটা বাজে , রোববার , আমাদের স্কুল বন্ধ , চান করে আয়নার সামনে টেরি বাগাচ্ছি , সদর দরজায় কড়া নাড়লো । আমিই গিয়ে দরজা খুলে দেখি ভুপেদা । কিন্তু এটা কী চেহারা !! মাথায় একমাথা ধুলোচুল , চোখ দুটো পাকা কামরাঙ্গার মত ঘোলাটে লাল , গায়ে জামা নেই , ধুতিটা চামটি ময়লা , মুখ দিয়ে ভকভক করে দারুণ গন্ধ বেরোচ্ছে । জড়িয়ে জড়িয়ে বলল
‘কত্তাবাবু আছেন গো দাদা ??’
‘কে রে ?’
দাদুও পুজো সেরে নিচে নামছেন । পরনে ধুতি , মাথায় চন্দনতিলক কাটা , একটা বড় সিঁদুরের টিপ , কোঁচাটা খানিকটা আঁচলের মত করে বাঁ হাতের বাহুতে রাখা , ডান হাতে ফুলের সাজি আর গলায় নামের থলে । ভূপাল দাদুকে দাওয়ায় দেখে ছুটে এগোতে গিয়ে কাটা কলাগাছের মত আছড়ে পড়লো সানবাঁধানো উঠোনে । সারা বাড়িসুদ্ধ লোক আমরা আঁতকে উঠলাম । দাদুও নিশ্চল দাঁড়িয়ে পড়েছেন । ঠাকুমার চোখ জোড়া এক-একটা মার্বেলের মতো হয়ে গেছে । ও দিন সকালে যন্ত্র নিয়ে যাওয়া ভূপাল আর এই ভূপাল কি একই লোক!! কোনরকম হাতে ভর করে আধবসা হয়ে ওঠে ভূপেদা
‘কত্তা গো আপনার সব যন্তর আমার এই পেটের মধ্যে । আকুন যা করবে তুমি করুন । ‘
গলায় চোখের জল আর গ্লাসের জল মাখামাখি হয়ে আছে । দাদু খানিকক্ষণ অদ্ভুতভাবে চেয়ে রইলেন । রাগ ঘেন্না ভালোবাসা সব মিশে সে আশ্চর্য চোখ । ইষ্টকে স্মরণ করে নেমেছেন সদ্য । আসলে পুরো নামতে পারেননি । উদাত্ত গলায় ডাকলেন
‘ মনি ‘
ঠাকুমার নাম লক্ষ্মীমণি । খুব কমই দাদুর গলায় আমরা এ ডাক শুনেছি । ঠাকুমা ঘোমটা সামলে এগিয়ে গেলে বললেন
‘ভূপালকে এক কাঠা মুড়ি দাও । ও যেন আর কোনদিন এ বাড়ির সদরে না আসে । ‘
গরদের খুঁট থেকে ঠং ঠং করে কটা টাকা ভূপালের গায়ে ছুড়ে দিয়ে দাদু আবার পুজোর ঘরে উঠে গেলেন